মেহেদী হাসান রবি প্রতিবেদক: শাহজাদপুরের পোতাজিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের ১৩০তম বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ০৮ মার্চ শুক্রবার পোতাজিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি  ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব জাহিদ ফারুক এম.পি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য জনাব চয়ন ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ শাহ্ আজম।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের  উপাচার্য বলেন, পোতাজিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়টি  যে ঐতিহ্য তৈরি  করছে তা আমাদেরকে অভিভূত করে। জাতীয় উন্নয়নে শিক্ষা যেমন  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে তেমনি সেই উন্নয়নকে টেকসই করতেও শিক্ষার  ভূমিকা অপরিসীম। দক্ষ মানবসম্পদ গড়তে  বিদ্যায়তনিক শিক্ষার যুগোপযোগীকরণের বিকল্প নেই।একটি দেশের জাতীয় লক্ষ্য, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক চেতনা- সর্বোপরি দেশপ্রেম ও বিশ্বপ্রেমে প্রাণিত নাগরিক তৈরিতে বিদ্যায়তনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বাংলাদেশে এমন কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে যা নির্ধারিত কারিকুলাম অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের নানাভাবে আলোকিত ও যোগ্য করে গড়ে তুলছে। পোতাজিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় তেমনই একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠার ইতিহাস এ অঞ্চলের মানুষের আধুনিক চিন্তা, শিক্ষানুরাগ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামের ইতিহাসের সঙ্গে একাত্ম।
উপাচার্য  আরো বলেন, উনিশ শতকে ভারতজুড়ে যে নবজাগরণ সূচিত হয়েছিল তার ছোঁয়া লেগেছিল তৎকালীন পূর্ব বাংলার বৃহত্তর পাবনা জেলার শাহজাদপুর থানার একটি প্রত্যন্ত গ্রাম পোতাজিয়ায়। স্থানীয় জমিদার, শিক্ষানুরাগী ও সমাজসেবকগণের যৌথ প্রচেষ্টায় ১৮৯৪ খ্রিষ্টাব্দে পোতাজিয়া ইংরেজি উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। যদিও বিদ্যালয়ের কার্যক্রম তারও ছয় বছর পূর্বে শুরু হয়েছিল। স্থান সংকট, অর্থের অপর্যাপ্ত জোগান, দেশভাগের অভিঘাত, কোনো সংকটই বিদ্যালয়টির অগ্রযাত্রাকে রুদ্ধ করতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে রাজনৈতিক আদর্শ লালন করতেন অর্থাৎ আত্মশক্তির উদ্বোধন, স্বদেশী সমাজ প্রতিষ্ঠা- তারই উজ্জ্বল রূপায়ণ আমরা দেখতে পাই তৎকালীন বাংলার প্রান্তিক এই জনপদ পোতাজিয়া গ্রামে। উপাচার্য মহোদয় বলেন, নারী শিক্ষার অগ্রগতির ইতিহাসে এই বিদ্যালয়টি কৃতিত্বের দাবি রাখে কারণ, বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের পাঠদানের ব্যবস্থা চালু ছিল। এছাড়াও শিক্ষার্থীদের সহশিক্ষা কার্যক্রমে উৎসাহিত করা, সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা, শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতার অনুশীলন বিদ্যালয়টিকে এ অঞ্চলের অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে। পোতাজিয়া বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে শ্রদ্ধাশীল, দেশপ্রেমের মন্ত্রে উজ্জীবিত, মানবিক শিক্ষার্থী গড়ে তুলতে ভূমিকা রাখবে বলে তিনি  আশা করেন।
সন্মানিত অতিথি জনাব চয়ন ইসলাম শাহজাদপুর নদী ভাঙ্গন কবলিত খুকনি, জালালপুর, ঘালা, রুপবাটি, সোনাতনী ও এনায়েতপুরের অংশবিশেষ এলাকাগুলোতে নদী ভাঙ্গন রোধে পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রীকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানান।
প্রধান অতিথি জনাব জাহিদ ফারুক তার বক্তব্যে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখায় মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে আগামী দিনে দেশ ও জাতির সেবা করার লক্ষ্যে নিজেদের তৈরি করার আহ্বান জানান। একই সাথে তিনি শাহজাদপুর নদী ভাঙ্গন কবলিত এলাকাগুলোর নদী ভাঙ্গন রোধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার সভাপতি ও যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রেসিডিয়াম সদস্য সাজ্জাদ হায়দার চৌধুরী লিটনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শাহজাদপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. শেখ আব্দুল হামিদ লাভলু, শাহজাদপুর পৌরসভার মেয়র মনির আক্তার খান তরু লোদী, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, শিক্ষানুরাগী অভিভাবকসহ স্থানীয় সুধীমণ্ডলী।